জাহাঙ্গীর আলম | টাঙ্গাইলঃ টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার হাওদা বিলের উপর কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত জোড়া ব্রীজ সংযোগ সড়ক না থাকায় কোন কাজে আসছে না।
সরেজমিনে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, মধুপুর পাহাড়ী অঞ্চলের হাওদা বিলের পশ্চিমপাড়ে কুড়াগাছা ইউনিয়ন আর পূর্ব পাড়ে অরণখোলা ইউনিয়ন। কুড়াগাছা ইউনিয়নের মালির বাজার থেকে একটি গ্রামীণ সড়ক দুই কিলোমিটার হাওদা বিল পাড়ি দিয়ে পূর্বপাড়ে অরণখোলা ইউনিয়নের গাছাবাড়ী নলকূপ পাড়ায় পাকা সড়কে মিলিত হয়েছে।
মালিরচালা বাজারের ব্যবসায়ী সোহেল রানা ও আকবর আলী জানান, এটি সেটেলমেন্টের পুরাতন রাস্তা। বছরের ৬ মাস এ রাস্তা বিলের পানির নিচে থাকে। আর বাকী ছয় মাস মানুষ পায়ে হেটে এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। হাওদা বিলের মাঝ খানের খালে সারা বছর পানি থাকে। এ খালের উপরই নির্মাণ করা হয়েছে এ জোড়া ব্রীজ।
কুড়াগাছা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম জানান, বিলের ওপারে জলছত্র বাজারে আনারস, কলা, আঁদা, হলুদসহ কৃষি পণ্য ও ফলের নিয়মিত পাইকারি হাট বসে। এপার থেকে এসব কৃষি ফসল, সবজি ও ফল জলছত্র বাজারে নিতে বিলের রাস্তা ও সেতু হতে পারে বড় সহায়ক। এ ছাড়াও বিলের রাস্তা দিয়ে চাপাইদ, মালিরবাজার অরণখোলা, পশ্চিম ভুটিয়া, গাছাবাড়ী ও জলছত্রসহ ১৫/২০ গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন।
বর্ষাকালে চলে নৌকায় পারাপার। এতে করে এলাকাবাসীর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এলাকাবাসীর এ দুর্ভোগ নিরসনের জন্য বর্তমান সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট প্রকল্পের আওতায় হাওদা বিলে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি জোড়া ব্রীজ নির্মাণ করেন। এলাকায় এটি জোড়া ব্রীজ হিসাবেই পরিচিত। কিন্তু ব্রীজের উভয় পাড়ের সংযোগ সড়ক উঁচু না থাকায় কাজে আসছে না এ জোড়া ব্রীজ। ফলে এলাকাবাসীকে পিরোজপুর-কাকরাইদ হয়ে ৮/১০ কিলোমিটার উল্টো ঘুরে জলছত্র পাইকারি বাজার এবং টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কে যেতে হয়।
কুড়াগাছার স্কুল শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, সংযোগ সড়ক উঁচু না থাকায় যানবাহন তো দূরের কথা বাইসাইকেল নিয়েও জোড় ব্রীজ পাড়ি দেয়া খুবই কষ্টকর।
কুড়াগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক জানান, গত অর্থ বছরে কাবিটার আওতায় কুড়াগাছা অংশের রাস্তায় মাটি ফেলা হয়েছিল। কিন্তু বর্ষাকালে বিলে ১০/১২ ফিট পানি জমে। ফলে বিলের ঢেউয়ের কারণে রাস্তা ভেঙ্গে যায়।
অরণখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম জানান, দুই বছর ধরে এ রাস্তায় মাটি ফেলা হয়। কিন্তু বর্ষাকালে পাহাড়ী ঢলের পানি নামা শুরু হলে রাস্তার মাটি থাকে না। গত দুই সপ্তাহ ধরে অরণখোলা অংশে কাবিটার আওতায় দশ ফিট উঁচু এবং বারো ফিট প্রশস্ত মাটির রাস্তার কাজ চলমান আছে। এবারের বর্ষায় এটি টিকবে কিনা কে জানে?
মধুপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজীব আল রানা জানান, বর্ষাকালে পাহাড়ী ঢল এবং বিলের প্রচন্ড ঢেউয়ে এখানকার কাঁচা রাস্তা টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এজন্য প্রতি বছরই নতুন মাটি ফেলা হয়। এবার রাস্তাটি টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে।
মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা ইয়াসমীন জানান, দ্রুত রাস্তা ও ব্রীজ দুটি চলাচল উপযোগী করার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট দুই ইউপি চেয়ারম্যানকে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি জানান, জোড়া ব্রিজটি চলাচল উপযোগি করার জন্য অবশ্যই প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।